ভারতবর্ষ তথা বিশ্ব যখন বিভিন্ন মত ও পথ নিয়ে দিশেহারা, সনাতনধর্ম্ম যখন বহু দেবদেবীর জপ ও আরাধনা নিয়ে একনিষ্ঠা-হীনতায় দিগভ্রান্ত এবং মানব সমাজ যখন উচ্ছৃঙ্খল চরিত্রহীনতায় পথভ্রষ্ট, এমনইএক যুগ-সন্ধিক্ষণে অবতাররূপে আবির্ভূত হয়ে, একেশ্বরবাদ প্রবর্ত্তন করে, আদ্বিজচত্তালে পরম পথের সন্ধান দিয়ে এক অখত্ত-ধর্ম্মের মিলন-সূত্রে গ্রথিত করার দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা নিলেন যুগস্রষ্টা ব্রহ্মবিদ্ অখত্তমণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব। যিনি জগতের কাছে অতি পরিচিত "বাবামনি" বলে।
বাবামনি কেবলমাত্র এক মহাপুরুষের নাম নয়, বাবামনি এক জীবন্ত আদর্শ, এক মনুষ্যরূপী ঈশ্বর। যদিও চলনে, বসনে, কাজে-কর্ম্মে -প্রতিমূহুর্তে ইনি বলতেন "I am an ordinary man - আমি এক অতি সাধারন মানুষ। কেবল তাঁর কাজ, তাঁর রচনা, তাঁর বাণী, তাঁর আদর্শ প্রমাণ করেছে যে তিনি শুধূ অসাধারণই নন তিনি একমেবদ্বিতীয়কম্। তাঁর অন্তর-সান্নিধ্যে আসা প্রকৃত ভক্তেরা জেনেছে, বুঝেছে এবং উপলব্ধি করেছে যে তিনিই জগতের সকলের পরম আপনজন -আর একথা নানাস্হানে, নানাভাবে, বিবিধ প্রসঙ্গে, স্বেচ্ছায় ভাবমূখে, কোথাও বিশেষ পরিস্হিতিতে দেওয়া তাঁর স্বপরিচয় প্রমাণ করেছে যে সকল জ্ঞানীগুনীভক্তগণের উপলব্ধিই সত্য -সত্যই তিনি অখণ্ডমণ্ডলেশ্বের।
অখণ্ডের প্রাণভোমরা "বাবামনি" কখনও বলেছেন -
- " আমি বলিব না যে আমি অবতার নই, কারন সত্যকে অস্বীকার করা যায় না।"
- " জগতের যে যেভাবেই যাহাকে পূজা করে সকলই আমাতে অর্পিত হয়।"
- আবার দেখি পাকিস্তানবাসী এক অন্তরঙ্গভক্তের প্রার্থনা তাঁর পদধূলি ডাকযোগে পাবার উত্তরে তিনি জবাব দিয়েছেন " তুমি আমাকে যে স্তরে পাইয়াছ, তাহাতে জানিয়াছ বিশ্বের সর্বস্হানের ধূলিতেই রয়েছে আমার পদচিন্হ। সুতরাং কলিকাতা বা বারানসীতে পতিত আমার পদধূলির তোমার কোন প্রয়োজন ?"
- পুপুনকি হইতে আসিয়ছেন কি? - অচেনা ভক্তের প্রশ্নের উত্তরে বাবামনি বলেছেন " এতকাছ থেকে আসিনি বাছা -এসেছি এতদূর থেকে যার নাগাল পাইনা - অসংখ্য যোযন;
কিন্তু আমি ভক্তসাথে না পারি সহিতে কোন ব্যবধান, যদিও তা হয় ইঞ্চির সহস্রাংশ্বেরও কম পরিমান।"
- কখনও বা তিনি দিয়েছেন ধরা ভক্তদেরকে দেওয়া অভয়বানীতে
" আমি তোমাদের নিত্যসঙ্গী, নিত্যসাথী। আমি সর্বদা তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকি, কাছে কাছে থাকি, পাছে পাছে থাকি। তোমাদের ধ্যানকালে আমি সাহ্মী-স্বরূপ- তোমাদের উপাসনাকালে আমি তোমাদের সমসাধক - তোমাদের অগ্রগমনের পথে আমি নিয়ত তোমাদের হাত ধরে নিয়ে যাই।"
- কোথাও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন এই বলে " আমি সুনিশ্চিতভাবে জ্ঞাত যে, অতীতের বিপুল গৌরবের সহিত ভবিষ্যতের অনন্ত মহিমার আমিই সেতুস্বরূপ।"
- এক শিশুর সরল প্রশ্নের " এত চিঠি তুমি কাকে, কোথায় লেখ?" উত্তরে ছল করে বলেছেন "ব্রষ্ণাণ্ডের সর্বস্হানে আমিই যে রয়েছি, তাই এখানের আমি পত্র লিখে ওখানের আমিকে মনের কথা জানাই" ।
- এক শিশুকে ছেলেধরার ভয় দেখাইয়া যে রেলকর্ম্মী সরাইয়াছিল তাহাকে সক্রোধে বলেছেন " আমি নইরে শুধু ছেলেধরা,
আমি ছেলেদের বাপ মা ধরা,
পিতামাতামহমহীরেও করি ধারণ,
আমিই যে রে রয়েছি ধরে এ-বিশ্বভূবন।।"
- ধরাধামে অবতীর্নের উদ্দেশ্য কি?
বাবামনি তাঁর আসার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ধরা দিয়েছেন এই বলে :-
- "আমি যে ব্রহ্ম, আমি যে ওঁকার, আমি যে চতুর্বেদের মূর্ত্তবিগ্রহ, এটা আমি স্পষ্ট অনুভব করি। ...কিন্ত্ত আমি ত এবার নিজের পূজা প্রবর্ত্তনের জন্য আসিনি।আমি এসেছি সকল পূজকের একটি মিলনভূমি তৈরী করতে।
- বিশ্বের সকলকে এক করিবার জন্য আমার জল্পনা, পরিকল্পনা, সমূদ্রমন্থন। আমার আদর্শ সমন্বয়ের আদর্শ।
- আমি এ যূগের কর্ম্মী নহি, আমি বহু অনাহত-যূগের পূর্বদূত। আমি বহুবিস্তৃত ভবিষ্যতের পূর্বদ্রষ্টা। আমার মতবাদ, আমার আদর্শ, কর্ম্মনতি, আধূনিককালের কোনও প্রাতঃস্বরনীয় মহাপূরুষের অনুকরণ নহে, মধ্যযূগের প্রাতঃস্বরনীয় মহাপূরুষের অনুসরণও নহে, তিনশত বৎসর পার হইলে আমার প্রকৃত কাজ আরম্ভ হইবে।
- আমাকে ভারতবাসী বুঝিবে একশতাব্দী পরে। আমার কাজ আরম্ভ হইবে এই পৃথিবীতে তিন শতাব্দী পরে।
- তিনশত বছর পরে, তোমাদের প্রতি ঘরে ঘরে,
শত বালবালিকার রূপে করিব নিবাস,
এই মোর জীবনের আশ; এ-জীবন তারই অধিবাস।"
ইনিই অখণ্ডের পরমারাধ্য বাবামনি যিনি ভাবমূখে আরও স্পষটতর ভাষায় প্রকাশ করেছন-
" যে যোগভূমিতে দাঁড়াইয়া ক্ষত্রিয়নন্দন শ্রীরাম নিজেকে সমাস্বরূপ বলিয়া ভাবিতে পারেন, যে যোগভূমিতে দাঁড়াইয়া শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে বিশ্বের কর্তা বলিয়া বর্ননা করিতে পারেন, যে যোগভূমিতে দাঁড়াইয়া শ্রীগৌরাঙ্গ নিজেকে দেবাদিদেব নারায়নের সহিত অভেদজ্ঞান করিয়া প্রয়োজনস্হলে শন্খ, চক্র, গদা-পদ্মকে শরণ করিতে পারেন, সেই যোগভূমিতে দাঁড়াইয়া আমিও এই কথা বলিবার অধিকার অর্জন করিয়াছি যে ……
আমিই রাম, আমিই কৃষ্ণ, আমিই বুদ্ধ,
আমিই শঙ্কর, আমিই রামানুজ, আমিই কবীর,
আমিই সুরদাস, আমিই ভক্তি, আমিই ভক্ত,
আমিই ভগবান, আমিই অবতার, আমিই
প্রলয়কারী পরমেশ্বর।।"
- কে এই বাবামনি আর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই। ভক্তগণদের জন্য তাঁর কথা :-
- " ত্তঁকারের পূজা করিলে আমার পূজা হয়। আমার পৃথক পূজার আর প্রয়োজন পরে না। ত্তঁকারকে বসাইলেই আমাকে বসান হয়। তাই আমার জন্মোৎসব উপলহ্মেও কোথাও ত্তঁকার বিগ্রহের পাশাপাশি আমার প্রতিচিত্র রাখা বিহিতও নহে, বিধেয়ও নহে।"
- " তবু তোমার প্রান যদি একান্তই না মানে, তাহা হইলে উৎসবাঙ্গনের যে কোন স্হানে আলাদা করিয়া একটা প্রতিচিত্র রাখিলে রাখিতে পার।"
---000---